আপনি কি প্রেগন্যান্ট? কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো দেখে, পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই বুঝতে পারবেন আপনি সন্তান ধারণ করেছেন কিনা। প্রেগন্যান্ট হলে পিরিয়ড মিস ছাড়াও শরীরে আরো কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।
আপনি হয়তো বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং শরীরে কিছু লক্ষণও দেখতে পাচ্ছেন। তবে আপনি নিশ্চিত নন এগুলো কি পিরিয়ডের পূর্ব লক্ষণ, নাকি গর্ভধারণের। আপনি বাসায় বসে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার আগেই নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন আপনি সত্যিই গর্ভবতী কিনা। যেমন: গন্ধ সংবেদনশীলতা, স্তনের পরিবর্তন এবং ক্লান্তি বোধ। কিন্তু গর্ভধারণের এসব পূর্ব লক্ষণগুলো অনেকটা পিরিয়ড হওয়ার আগের লক্ষণের সাথে মিলে যায়। যে কারণে এর পার্থক্য করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
আপনি গর্ভবতী কিনা সেটা বাসায় বসে জানার একমাত্র উপায় হল স্টিক দিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা কর। এরপর আলট্রাসাউন্ড করে নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো।
কখন প্রেগনেন্সির লক্ষণ শুরু হয়?
মনে রাখবেন একেক জনের শরীর একেক রকম। প্রেগনেন্সির লক্ষণগুলো একেক জনের মধ্যে একেক সময় দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো মায়ের শুরুতেই সব লক্ষণ দেখা যায়। আবার অনেকের গর্ভধারণের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত কোন লক্ষণই দেখা যায় না। যদিও তাদের সংখ্যা অনেক কম।
ধরে নিচ্ছি আপনার মাসিক/পিরিয়ডের সময়কাল ২৮ দিন। অর্থাত যাদের ২৮ দিন পরপর মাসিক হয়। তাদের জন্য প্রেগনেন্সির লক্ষণ প্রকাশ পাবার একটা খসড়া টাইমলাইন নিচে দেওয়া হলো।
আপনার শেষ পিরিয়ডের প্রায় ১৪ দিন পর: গর্ভধারণ করবেন (Conception)
আপনার শেষ পিরিয়ডের ১৭ বা তার বেশি দিন পর: আপনার গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা তৈরি হবে,স্তনের পরিবর্তন লক্ষ করতে শুরু করবেন, ক্লান্ত বোধ করবেন, ব্যাসাল বডির (Basal body) তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে
আপনার শেষ পিরিয়ডের ২০ থেকে ২৬ দিন পর: ইমপ্লান্টেশনের এর ফলে সামান্য রক্তপাত দেখা যায়, সার্ভিকাল শ্লেষ্মা (Mucus) ও ঘন হতে পারে
আপনার শেষ পিরিয়ডের ২৮ থেকে ৩৫ দিন পর: ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হবে, মুড সুইং বা মেজাজ পরিবর্তন হতে শুরু করবে এবং পিরিয়ড মিস হবে।
আপনার শেষ পিরিয়ডের ৩৫ দিন পরে বা তারপরে: প্রেগনেন্সির অন্য লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করবে।
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ:
কিছু মহিলাদের প্রেগনেন্সি টেস্ট করার আগেই সব ধরনের লক্ষণ শুরু হয়ে যায়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে অল্প বা কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো –
পিরিয়ড মিস হওয়া
ক্লান্তি/অবসাদ বোধ করা
ব্যাসাল বডির(Basal body) তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
স্তনের পরিবর্তন (বড় হয়ে যাওয়া বা অন্যরকম বোধ করা)
খুব অল্প পরিমাণে রক্তক্ষরণ (ইমপ্লান্টেশেনের কারণে)
সার্ভিকাল শ্লেষ্মার (Mucus) পরিবর্তন
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ
মেজাজ পরিবর্তন
পেট ফুলে যাওয়া
বুক জ্বালাপোড়া করা
সকালে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া (মর্নিং সিকনেস)
খাবারে অনীহা
অতিরিক্ত লালা তৈরি হওয়া
“হাসপাতালে যাবার সময় কী নিয়ে যাবেন?”
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে: (গর্ভাবস্থার ২ থেকে ৪ সপ্তাহ)
১. ব্যাসাল বডি(Basal body) তাপমাত্রা বেড়ে যায়
আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যাসাল বডি থার্মোমিটার (সাধারণ জ্বর মাপার থার্মোমিটার নয়) দিয়ে নিজের শরীরের তাপমাত্রা মাপেন, দেখবেন আপনার পুরো প্রেগনেন্সির সময়জুড়ে এটা ১ ডিগ্রি করে বাড়ছে। বাচ্চা যত বড় হয়, ব্যাসাল বডি তাপমাত্রা তত বাড়তে থাকে।
যদিও শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার অন্যান্য আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে এটা প্রেগনেন্সির অন্যতম একটি লক্ষণ।
২. গন্ধ সংবেদনশীলতা
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হলো ঘ্রাণ সংবেদনশীলতা। আপনি সব জিনিসের গন্ধ খুব তীব্রভাবে বুঝতে পারবেন। গর্ভধারণের আগে আপনার কাছে যে গন্ধ বেশ হালকা মনে হত, সেটা অনেক তীব্র মনে হবে। এমনকি কোনো কোনো গন্ধ অসহ্য মনে হতে পারে।ধরুন ভাত আপনার বেশ প্রিয়, হঠাত আপনি ভাতের গন্ধ পেতে শুরু করলেন এমনকি ওটা খাওয়া আপনার পক্ষে অসম্ভব মনে হলো। এমন হলে আপনি প্রেগনেন্সি টেস্ট করে দেখতে পারেন।
৩. স্তনের পরিবর্তন
গর্ভধারণের শুরুর দিকে স্তনের কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।যেমন: স্তন নরম হয়ে যাওয়া, ফোলা ভাব তৈরি হওয়া এবং স্তনের বোঁটার চারিদিক অসমান ও কালো হয়ে যাওয়া।
মূলত ইস্ট্রোজেন(Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন(Progesterone) হরমোনের ফলে এমনটা হয়ে থাকে।এই স্তনের পরিবর্তন আপনার শরীরে দুধ তৈরির একটি প্রাথমিক প্রস্তুতি। এর ফলে স্তনে ব্যথাও হয়।
আপনার স্তনের চারপাশের বৃত্ত, যাকে এ্যারিওলা(Areola) বলা হয় সেটা ঘন হবে এবং এর ব্যাস বৃদ্ধি পাবে।আপনার এ্যারিওলাতে ছোট ছোট বাম্পস থাকে, এগুলোকে মন্টগোমেরি টিউবারকল (Montgomery’s Tubercles) বলা হয়। এগুলো আপনার স্তনে আগেও ছিল। গর্ভধারণ করলে এই বাম্পসের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং বেশি বেশি তেল তৈরি করার জন্য প্রস্তুত হয়। এই তেল স্তনের বোটা কে পিচ্ছিল (Lubricate) করে যেন আপনার শিশু সঠিকভাবে দুধ খেতে পারে।
৪. ক্লান্তি বোধ করা
ধরুন আপনি কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া পিঠে ভারী বস্তা নিয়ে উঁচু পাহাড়ে উঠছেন। দিনে দিনে আপনার পিঠের বস্তা ক্রমেই ভারী হচ্ছে। তাহলে আপনার যেরকম ক্লান্ত লাগবে, প্রেগনেন্সির সময়ের ক্লান্তিকে অনেকেই এটার সঙ্গে তুলনা করে থাকেন।
গর্ভধারণের পর আপনার জরায়ুর ভিতরে, শিশুর জীবন ধারণের জন্য একটি প্লাসেন্টা গঠিত হয়, সেই প্লাসেন্টা গঠন করতে প্রচুর পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়।যে কারণে আপনার স্বাভাবিক চলাফেরা বা উঠা-বসা করতে কষ্ট হয় এবং দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন।প্রায় প্রতিটি মা-ই এসময়ে খুব ক্লান্ত বোধ করেন।
৫. ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং বা গর্ভধারণের কারণে রক্তপাত
প্রেগনেন্ট অবস্থায়ও রক্তপাত হয়, তবে তা খুব অল্প পরিমাণে। কারো কারো গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিন পরেও স্পটিং বা স্বল্প রক্তপাত হতে দেখা যায়, যেটা ইমপ্লান্টেশন রক্তপাত নামে পরিচিত।
আপনার পিরিয়ড হওয়ার সম্ভাব্য দিনগুলোতে হালকা দাগ বা ইমপ্লান্টেশনের রক্তপাত দেখা যেতে পারে।এটি গর্ভধারণের প্রাথমিক সময় এর লক্ষণ। সহবাসের পর নিষিক্ত ডিম্বাণু নিজেকে জরায়ুর দেয়ালে আটকে নেয়। এ পদ্ধতিকে ইমপ্লান্টেশন বলে। এ সময় স্পটিং (স্বল্প রক্তপাত) ও মাসিকের ব্যথার মত ব্যথা হতে পারে।
কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে ইমপ্লান্টেশন রক্তপাত ও পিরিয়ডের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়-
ইমপ্লান্টেশন রক্তপাত হলে রক্তের রং হালকা গোলাপী বা বাদামি হবে, পিরিয়ডের মত লাল হবে না।
এক্ষেত্রে পিরিয়ডের তুলনায় অনেক হালকা রক্তপাত হয়। একটানা রক্ত না গিয়ে অল্প কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন স্থায়ী হয়।
তবে, মনে রাখবেন, আপনার পিরিয়ড যদি অনিয়মিত হয়ে থাকে, তাহলে গর্ভধারণ ছাড়াই আপনার পিরিয়ড চক্রের মাঝামাঝি সময়ে হালকা রক্তপাত বা বাদামী স্রাব দেখা যেতে পারে।
৬. সার্ভিকাল শ্লেষ্মা বা মিউকাসের পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হলো যোনী থেকে সাদা রঙের স্রাব বা সার্ভিকাল মিউকাস বের হওয়া। এ সময় এর পরিমাণ বেড়ে যায়। গর্ভধারণের পরে সার্ভিকাল মিউকাস ঘন এবং ক্রিমের মতো দেখাবে।
ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পরে যোনির ভেতরে পরিবর্তনের কারণে এটা হয়ে থাক। এই স্রাব পুরো গর্ভাবস্থায় চলতে থাকে এবং ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে,একে লিউকোরিয়া (Leukorrhea) বলে।
এমন দেখলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। পাতলা ও দুধের মত সাদা স্রাব স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর।
তবে যদি স্রাবে গন্ধ থাকে, ঘন হয় এবং যোনীতে জ্বালাপোড়া করে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
৭. ঘন ঘন প্রস্রাব
ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি লক্ষণ। এ সময়ে হরমোনে নানা পরিবর্তন দেখা যায়। এইচসিজি( HCG) হরমোনের ফলে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় যা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি কর। এর ফলে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে।
এছাড়াও আপনার শরীরে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে মূত্রথলিতে জায়গার পরিমাণ কমে যায়, এ কারণেও তখন ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হয়।
৮. মেজাজের পরিবর্তন
এই ভালো লাগে তো এই মেজাজ খাট্টা হয়ে যায়– হুমম, এটা প্রেগনেন্সির খুব সাধারণ লক্ষণ। অবসাদ, মানসিক চাপ এবং শরীরের বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভকালীন সময়ে মুড সুইং করাটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।এই সময় হরমোনের অনেক ওঠানামা হয়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওঠানামা করে মেজাজও। যে কারনে শরীর ও মনের উপর খুব চাপ পড়ে।
আপনার গর্ভাবস্থার চার সপ্তাহের আগেই এ ধরনের মেজাজের পরিবর্তন লক্ষ করবেন। মায়েদের জীবনে এ সময়ে খুব বড় পরিবর্তন আস। তাই আপনার মেজাজ খারাপ হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই। নিজেকে ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও শরীরের যত্ন নিন।
একবার পিরিয়ড মিস হওয়ার পর: গর্ভাবস্থার ৪- ৯ সপ্তাহ
৯. পিরিয়ড মিস হওয়া
আপনার মাসিক যদি আগে নিয়মিত হয় এবং নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাবার পরেও মাসিক না হয়, তাহলে এটাকে গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়া যায়।
১০. পেট ফুলে যাওয়া
পেট ফাঁপা লাগা, পেট ভরা ভরা লাগা কিংবা পেটে গ্যাস জমেছে বলে মনে হওয়া এ সময়ের খুবই সাধারণ ঘটনা। সাধারনত গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের সময়টায় এই সমস্যা দেখা যায়। হরমোনগত পরিবর্তনের (প্রোজেস্টেরন হরমোন) কারণে মূলত এমনটা হয়ে থাকে৷ এই হরমোনের কারণে হজম শক্তি কমে যায়, ফলে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং পেট ফাঁপা লাগে।
এ কারণে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে দেখা যায়। অর্থাত পায়খানা নিয়মিত হয় না। এবং পায়খানার ধরণ শক্ত হয়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো। ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে।
১১. অম্বল বা বুক জ্বালাপোড়া করা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বুক জ্বালাপোড়া করার মতো অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা যায়। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে এমনটা হয়ে থাকে। প্রোজেস্টেরন (Progesterone) এবং রিলাক্সিন (Relaxin) নামক হরমোন আপনার শরীরের মসৃণ পেশীগুলোকে শিথিল করে দেয়। যার ফলে আপনার পরিপাকতন্ত্রের খাবার হজম প্রক্রিয়া আরো ধীর গতিতে চলে।
বুক জ্বালাপোড়া কমানোর দুটি কার্যকরী ঔষধ হলো টামস (Tums) এবং রোলাইডস (Rolaids)। এছাড়া চিনিছাড়া গাম চিবালেও কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।
আপনি যদি বাংলাদেশে থাকেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে এক চামত ইসুব গুল পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। ইসুব গুল আগে থেকে ভিজিয়ে রাখবেন না। ভেজানোর সাথে সাথে খাবেন। গ্যাস, শক্ত পায়খানা ও অনিয়মিত পায়খানার একটি দারুণ ওষুধ এটি।
১২. মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব
প্রেগন্যান্ট হলে বমি হয়। বাংলা সিনেমার দরুণ আমরা সবাই এটা জানি। তবে সবার যে বমি হয় তা কিন্তু না। বিশেষ করে সকাবেলা বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার ঘটনা বেশি হয়। এটি ‘মর্নিং সিকনেস’ নামে পরিচিত। তবে বমি বমি অনুভূতি বা বমি আপনার দিনে বা রাতে যে কোন সময় হতে পারে।
সাধারনত বমি ভাব বা বমি গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়। অনেক সময় আরো আগেও হতে পারে। বেশিরভাগ মায়ের নবম সপ্তাহ থেকে বমি বমিভাব শুরু হয়।
প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে এই শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হয়। এস্ট্রোজেন(Estrogen) এবং এইচসিজি (HCG) হরমোনও এর জন্য দায়ী।
১৩. খাবারে অনীহা
আপনার শরীরে আরেকটি প্রাণের জন্ম হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আপনার আগের তুলনায় বেশি খাওয়ার কথা। অথচ প্রথম দিকে ঠিক উল্টোটা হয়। প্রেগনেন্সির শুরুর দিকে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। সবকিছুর তীব্র গন্ধ পাওয়াটাও খাবারে অনীহা সৃষ্টি করতে পারে। যে খাবার ছাড়া আপনার একবেলাও চলতো না, যেমন চা বা কফি, এসময় সে খাবারের গন্ধ পাওয়ামাত্র আপনার বমি চলে আসতে পারে।
শরীরের হরমোন বেড়ে যাওয়ার ফলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।ফলে বেশিরভাগ মা কিছুই খেতে পারে না। তবে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। প্রেগনেন্সির সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার থেকেই খাবারের রুচি ফিরে আসে। এবং বমি কমে যায়।
১৪. অতিরিক্ত লালা তৈরি হওয়া
স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত লালা তৈরি হওয়া গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ‘টিয়ালিজম গ্র্যাভিড্যারাম'(Ptyalism Gravidarum) বলা হয়।
এই লক্ষণ শুরু হয় প্রথম দিকেই। এর কারণও আছে। অতিরিক্ত লালা আপনার পাকস্থলীর অ্যাসিডের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনার মুখ, দাঁত এবং গলাকে রক্ষা করে।
প্রেগনেন্সি ও পিরিয়ডের লক্ষণ এর মধ্যে পার্থক্য
গর্ভাবস্থার লক্ষণ এবং পিরিয়ডের লক্ষণগুলো অনেকটা একই রকম। তাই আপনি গর্ভবতী কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আপনার শরীরের ব্যাসাল তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে,যোনি স্রাব ঘন ও ক্রীমের মত হবে এবং স্তনের বোটা বেশি কালো হয়ে যাবে। এই লক্ষণগুলো গর্ভধারণের কিছুটা নির্ভরযোগ্য লক্ষণ তবে কোনটাই ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে আপনি সন্তানসম্ভবা।
গর্ভাবস্থায় আরো কিছু লক্ষণ যেমন: বমি বমি ভাব, নরম স্তন, ক্লান্তি, ফুলে যাওয়া, গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি পিরিয়ডের লক্ষণ এর সাথে মিলে যায়। এক্ষেত্রে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না আপনি সন্তানসম্ভবা কিনা।
কখন বাসায় প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন?
প্রেগনেন্সি টেস্ট পরীক্ষা করার জন্য আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো। তখন আপনি সঠিক ফলাফল পাবে। আপনি যদি পিরিয়ড মিস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না চান, তাহলে যৌন মিলনের পর অন্তত এক বা দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করা ভালো।
আপনার জরায়ুতে ভ্রুণ নিষিক্ত হওয়ার প্রায় ছয় থেকে বারো দিন পর শরীর হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) নামে একটি হরমোন তৈরি করা শুরু করে। বাসায় বসে স্ট্রিপ টেস্ট আপনার প্রস্রাবে এই এইচসিজি (HCG) হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করে।
এখনকার বেশিরভাগ টেস্ট কিট ৯৯% সঠিক ফলাফল দেয়, যদি সেগুলো আপনি সঠিকভাবে ব্যবহার করেন । টেস্টের আগে কিটগুলোর প্যাকেটে থাকা নির্দেশনা ভালো করে পড়ে নিন।
মনে রাখবেন বাসায় বসে যেসব পরীক্ষা করা হয় সেগুলোতে অনেক সময় ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। মানে আপনি আসলে প্রেগনেন্ট, কিন্তু টেস্টের ফলাফল দেখাচ্ছে নেগেটিভ।
সবচেয়ে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে। আপনার পিরিয়ড মিস হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক ফলাফল জানুন। গর্ভাবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার এটাই সব থেকে ভালো উপায়।
যদি আপনার রক্ত পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ বা ইতিবাচক আসে, তাহলে অভিনন্দন আপনাকে! এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখাই এখন আপনার কাজে আসবে।
আমাদের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা সুখকর হোক। নিয়মিত গাইনির কাছে চেক আপ করতে ভুলবেন না!